এক যুগ আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নিষ্ঠুর, অমানবিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে এই দিনটি।
প্রতিক্রিয়াশীল একটি চক্র নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল এই দিনটিতে। ১২ বছর হয়ে গেলেও নজিরবিহীন, ঘৃণ্য ও ক্ষমার অযোগ্য এই অপরাধের বিচারের রায় এখনো হয়নি, যা সত্যিকারার্থেই গণতান্ত্রিক একটি দেশের জন্য দুঃখজনক ।
২০০৪ সালে সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ওই বছরের ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ভাষণ শেষ করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চ থেকে নামতে যাচ্ছিলেন। ঠিক এ সময় একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ট্রাকে থাকা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোঁড়া হলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা মানববর্ম হিসেবে নিজেদের দাঁড় করিয়ে নেত্রীর প্রাণ বাঁচান।
হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রায় পাঁচশ জন। হামলার ধরণ দেখে বোঝা যায়, মূলতঃ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যাই ছিলো তাদের টার্গেট।
ওই সময় ক্ষমতাসীন সরকার এই মামলাকে ঘিরে জজ মিয়া গল্পের অবতারণা করেছিল। এমনকি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নামে মনগড়া রিপোর্টও তৈরি করা হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের এহেন আচরণে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিল দেশবাসী।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিআইডি এই মামলার তদন্ত শুরু করে। ওই সময় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাইসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে হামলার জন্য মূলত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশকে (হুজি) দায়ী করা হয়। ২০১১ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্ত করা হয় ।
ধারণা করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত আমলেই নিম্ন আদালত থেকে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় চলে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। হামলায় আহতদের মধ্যে এখনো অনেকে দেহে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন।
গত সপ্তাহে সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছেন, আগামী মাসে মামলার রায় হতে পারে। আমরা সরকারি কৌঁসুলির এ বাক্যে আশ্বস্ত হতে চাই। আমরা চাই, ২১ আগস্টের নৃশংস হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, বিচারের অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটুক।
0 comments :
Post a Comment