দ্বাদশ খেলোয়াড় জোবায়দা!

এস কে রেজা পারভেজ :
অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের সাজা হওয়ার পর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর পরিণতি নিয়েও চিন্তায় পড়েছে বিএনপি।

দুর্নীতির মামলাগুলোয় তাকেও (খালেদা জিয়া) সাজা দেওয়া হলে এক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেবেন কে- এই প্রশ্নটি নেতা-কর্মীদের মাঝে উঠতে শুরু করেছে। যদিও দলটির কিছু নেতার বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’ হিসেবে আছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান। বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা ‘ইনজুরিতে পড়লে’ তিনি রাজনীতির মাঠে নামবেন। 

সম্প্রতি অর্থপাচার মামলায় সাজা হওয়ায় তারেক রহমান নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর একইভাবে খালেদা জিয়ার সাজা হলে তিনিও নির্বাচন করতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাঠে নেতৃত্ব দিতে পারেন জোবায়দা। আর নেপথ্যে থেকে দিক নির্দেশনা দেবেন খালেদা জিয়া ও তারেক, এমনটিই আলোচিত হচ্ছে দলীয় পরিমণ্ডলে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ‘মিথ্যা মামলায়’ অভিযুক্ত করে সরকার বিএনপির ‘জনপ্রিয় নেতাদের’ নির্বাচন করতে না দেওয়ার চক্রান্ত শুরু করেছে। এতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। এজন্য সরকার সব ধরনের ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করলেও সে ক্ষেত্রে ইতিবাচক কিছু হবে না বলেও মনে করছেন তারা।

যেমনটি বলছিলেন দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘চক্রান্ত শুরু হয়েছে মাত্র। অনির্বাচিত ও দুর্নীতিবাজ সরকার তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের নির্বাচন করতে দেবে না। সেজন্য তাদের মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হবে। তারেক রহমানকে দিয়ে এটি শুরু হয়েছে। সবাইকে এই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে।’

বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘সরকার তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়। তবে সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না। এটা সরকারের ভুল ধারনা। নির্বাচনে জয়ী হতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের দরকার হবে না। কারণ জনগণ এই সরকারের ওপর এমনিতেই ক্ষুব্ধ।

দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তারেক রহমানকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে সেখানে বিচারকে প্রভাবিত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্তকর্তা বা বাদী কেউই বলেননি, তারেক রহমান টাকা নিয়েছেন। তাহলে কিসের ভিত্তিতে তাকে সাজা দেওয়া হলো? সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সেজন্য সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুম করছে, হত্যা করছে এবং মিথ্যা মামলায় জেলে নিচ্ছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বুধবার রাইজিংবিডিকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দুদকের করা মামলা, বাকি মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা, নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে। সব মামলাই এখন বিচারাধীন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলাগুলোর মধ্যে চারটি সেনা সমর্থিত ২০০৭ সালের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। বাকি দুর্নীতির মামলাসহ অপরগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা।

দুদকের করা মামলাগুলো হচ্ছে- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা।

এছাড়া দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানও স্বামীর সঙ্গে দুদকের একটি মামলার আসামি। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মৃত আরাফাত রহমান কোকোও সাতটি মামলার আসামি ছিলেন।



জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে উদ্ভূত দুই মামলা, এনবিআরের করা কর ফাঁকির এক মামলা, রাষ্ট্রদ্র্রোহের এক মামলা ও মানহানির দুই মামলা রয়েছে এর মধ্যে। মানহানির একটি মামলায় লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অর্থ পাচারের এক মামলায় তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে ও জরিমানা করা হয়েছে।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিএনপির পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শুধু খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানকে নয়, বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের এই সরকার নির্বাচন করতে দেবে না। অন্তত তাদের কর্মকা-ে এই রকমই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এর অগ্রযাত্রাকে থামানো যাবে না, দল তার আপন গতিতেই চলবে।’

দলের ক্রান্তিকালে তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসতে পারেন। তাবে বিষয়টি জিয়া পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’

বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, ডা. জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে আসা নির্ভর করছে সর্বিক পরিস্থিতির ওপর। অন্তত দলের ক্রান্তিকাল না হলে এই সম্ভাবনা নেই। তবে সেই ধরনের পরিস্থিতি হলে জিয়া পরিবার ও দলের ঐক্য ধরে রাখতে জোবায়দা রহমানের বিকল্প নেই।

তাদের মতে, নেতাকর্মীদের মাঝে জোবায়দা রহমানের ভালো ইমেজ রয়েছে। তার বাবা নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান মাহবুব আলী খানও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে ও বউ হওয়ায় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ তাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে বলে নেতাকর্মীদের বিশ্বাস। তাছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সাধারণ গৃহিনী থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। জোবায়দা রহমানও পারবেন।

এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়া তারেক রহমান ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তির পর স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে জোবায়দা লন্ডনেই অবস্থান করছেন। স্বামীর সঙ্গে লন্ডন যাওয়ার সময় সরকারি চাকুরে জোবাইদা শিক্ষা ছুটি নিয়েছিলেন। পরে তা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। লন্ডন যাওয়ার পর কয়েক দফায় ছুটি বাড়ান জোবাইদা। তবে তার সর্বশেষ আবেদন আর গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়। প্রায় ছয় বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ২০১৪ সালে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে আসার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তিনি শিক্ষিত, বড় বংশের সন্তান এবং সর্বোপরি তার শ্বশুর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, শাশুড়ি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার স্বামী দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। সুতরাং তিনি রাজনীতিতে এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এটি তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমাদের বলার কিছু নেই। অপেক্ষা করতে হবে তিনি রাজনীতিতে আসবেন কী আসবেন না। তবে রাজনীতিতে আসার জন্য মেধা, শিক্ষাসহ সব ধরনের যোগ্যতাই তার আছে।’

বিএনপির মনোবল অটুট আছে জানিয়ে দলটির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি সকল কিছুকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছে এবং করবে।’
তথ্যসুত্র : রাইজিংবিডি.কম


Share on Google Plus

About faridpur info 24

Faridpurinfo24.com-ফরিদপুরের তথ্য বাতায়নে আপনাদের স্বাগতম। ফরিদপুরের সকল খবরাখবর আপনাদের কাছে পৌছে দিতেই আমাদের এই প্রয়াশ। আপনার সকল মতামত ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন। সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. মনিরুল ইসলাম টিটো ফরিদপুর । মোবাইল: ০১৭১৬৩৪৬০৩০

0 comments :

Post a Comment