সত্যজিতের অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে, মামলা করেছে দুদক

সাজ্জাদ হোসেন বাবু
ফরিদপুর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা সত্যজিত মুখার্জির অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় মামলা করেছে দুদক। খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর এপিএস থাকাকালে সত্যজিত মুখার্জির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়ার পর সত্যজিত মুখার্জির ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ২০১৫ সালের মে’তে দুদকের উপপরিচালক কে এম মিছবাহ উদ্দিনকে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। দুই বছর একমাস অনুসন্ধান শেষে সত্যজিতের বিরুদ্ধে দুই কোটি কুড়ি লাখ বাষট্টি হাজার সাতশ ছাব্বিশ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ মেলে। এ ঘটনায় গত ২৯ জুন মিছবাহ উদ্দিন বাদি হয়ে ঢাকার রমনা থানায় মামলা করে। মামলা নম্বর-৬১।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ঘুষ লেনদেন থেকে শুরু করে নানা অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় প্রথম মামলা হয়। পরে বিভিন্ন সময় একই অভিযোগে আরও ১৮টি মামলা হয়। ঢাকার পল্টন থানাতেও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা আছে। মামলার শুরু থেকেই পালিয়ে ছিলেন তিনি। গত ২২ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ঢাকার নাখালপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে সত্যজিত মুখার্জিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল। ভোর পাঁচটার দিকে তাকে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হয়। 

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সত্যজিত মুখার্জি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর এপিএস ছিলেন। ওই পদে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তিনি এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনুসন্ধান করা হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তাকে তার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পত্তির বিবরণ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হয়। সে অনুযায়ী তিনি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সম্পত্তির বিবরণী জমা দেন। তিনি যে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, তিনি মোট ৬২ লাখ ৬২ হাজার ২৯০ টাকার মূল্যের স্থাবর সম্পদ কিনেছেন। কিছু সম্পদ তিনি দানসূত্রেও পেয়েছেন। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, তার অর্জিত মোট স্থাবর সম্পদের মধ্যে একটি দলিলে ১১২ শতক জমি এবং অপর একটি দলিলে ৪৮৫ শতক জমি তার ঠাকুরমা তাকে দান করেছেন। তার দান হিসেবে পাওয়া জমির মোট দাম ২২ লাখ ২৭ হাজার টাকা। তথ্য প্রমাণে দেখা যায়, সত্যজিত মুখার্জির অর্জিত স্থাবর সম্পত্তির মোট দাম ৬২ লাখ ৬২ হাজার ২৯০ টাকা। তার নিজের দেয়া হিসেব বলছে, দান হিসেবে পাওয়া সম্পদ ছাড়া তিনি ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ২৯০ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক হয়েছেন। এছাড়া, সত্যজিত বিভিন্ন উৎস থেকে অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে সম্পদের বিবরণী দিয়েছেন। হিসেবে তার পরিমাণ দুই কোটি ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৮ টাকা। সবমিলিয়ে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হয়, দুই কোটি ৯৭ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। 

সূত্র জানায়, সম্পদের পাশাপাশি দায়দেনার তথ্যও দুদকে দিয়েছেন সত্যজিত। তার দায়দেনার পরিমাণ ১২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। দুদকের হিসেবে তার মোট সম্পদ থেকে এই টাকা বাদ দিলে এখনও দুই কোটি ৮৪ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৮ টাকার মালিক তিনি। সত্যজিতের আয়কর নথি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তিনি ২০১৩-২০১৪ করবর্ষ থেকে আয়কর দিচ্ছেন। তিনি তার বেতন ভাতাসহ আয়ব্যয় আয়কর নথিতে দেখিয়েছেন। যে কারণে তার এপিএস হিসেবে পাওয়া বেতন ভাতা আলাদা করে বাদ দেয়া হয়নি। নিট আয়ের সঙ্গে দেখানো হয়েছে। ২০১৩-২০১৪ করবর্ষ থেকে ২০১৫-২০১৬ করবর্ষ পর্যন্ত তার নিট আয় ৬৪ লাখ ১১ হাজার ১২১ টাকা। এই টাকা তার মোট সম্পদ থেকে বাদ দিলে দুই কোটি কুড়ি লাখ ৬২ হাজার ৭২৬ টাকা বাকি থাকে। তথ্য প্রমাণ বলছে তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বা অবৈধভাবে তিনি এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দেয়।  (স্মারক নম্বর দুদক/বি অনু ও তদন্ত ১.৫০-২০১৫/২৭১২৪, তারিখ ২৭/৬/২০১৬)। পরে গত ২৯ জুলাই দুদকের উপপরিচালক মেছবাহ উদ্দিন বাদী হয়ে সত্যজিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল সত্যজিৎকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় খন্দকার মোশাররফ প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে খন্দকার মোশাররফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। ওই দিনই বিকেলে জেলা ছাত্রলীগ জরুরি সভা করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ, ঘুষ, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সত্যজিৎকে জেলা কমিটির সাধারণ স¤পাদক পদ ও সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে।

Share on Google Plus

About faridpur info 24

Faridpurinfo24.com-ফরিদপুরের তথ্য বাতায়নে আপনাদের স্বাগতম। ফরিদপুরের সকল খবরাখবর আপনাদের কাছে পৌছে দিতেই আমাদের এই প্রয়াশ। আপনার সকল মতামত ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন। সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. মনিরুল ইসলাম টিটো ফরিদপুর । মোবাইল: ০১৭১৬৩৪৬০৩০

0 comments :

Post a Comment